মোঃ সোহেল রানা, রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি:
ভেদভেদী নতুন পাড়ার রাস্তার বেহাল অবস্থা নিয়ে এলাকাবাসীর ভোগান্তির যেন শেষ নেই। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এই সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় প্রতিদিনই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই কোমর পরিমাণ পানি জমে থাকে, ফলে স্কুলগামী শিশু থেকে শুরু করে কর্মজীবী মানুষ সবাইকে প্রতিদিন কষ্ট করে চলাচল করতে হয়। এমনকি এই এলাকায় জরুরি সময়ে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস এবং অন্যান্য যানবাহন যাওয়ার কোন সুযোগ নাই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি শুধু কথাতেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের নাম করে নানা প্রকল্প নেয়া হলেও এই এলাকার মানুষ এখনো সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
অন্যদিকে, দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে আশপাশের ঘরবাড়ি পর্যন্ত কাদাজলে ডুবে যায়। এতে এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, আবার ব্যবসা-বাণিজ্যেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
এলাকাবাসী আবু জামাল বলেন, বৃষ্টির দিনে রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া দুঃস্বপ্নের মতো। সিএনজি আটকে যায়, হেঁটে নিলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়। রাস্তা নির্মাণের সময় ছয় ফুট প্রশস্ত রাখার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা মাত্র তিন ফুটে সীমিত করা হয়। এতে একটি সিএনজি বা ভ্যান ঢুকলে বিপরীত দিক থেকে কোনো মানুষ হেঁটে যেতে পারেন না।
শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যেতে গিয়ে ভয় লাগে। হঠাৎ সিএনজি এলে সরে দাঁড়ানোর জায়গা পাই না।
স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে জেলা প্রশাসন, উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদে দরখাস্ত দিয়ে আসছেন। কিন্তু কোথাও সাড়া মেলেনি।
স্থানীয় আলাল বলেন, বিগত ১৭ বছরে আমাদের এলাকায় উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে একটি টাকাও খরচ করা হয়নি। যেন আমরা সরকারের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত একটি দ্বীপ। আমাদের নতুনপাড়ার সমাজের মসজিদটি পাহাড়ি ঢালে অবস্থিত। চারপাশে গার্ডওয়াল না থাকায় বর্ষায় মাটি ভেঙে পড়ছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। মুসল্লিরা এখন আতঙ্ক নিয়ে নামাজ আদায় করেন।
স্থানীয়রা বলছেন, বহুবার লিখিত আবেদন দেওয়া হলেও প্রশাসনের তরফে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন।অভিযোগগুলো সত্য। তবে বাজেট সীমিত থাকার কারণে অনেক সময় প্রকল্প অনুমোদন পায় না।
এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত রাস্তা প্রশস্ত করে অন্তত ছয় ফুট করা হোক এবং মসজিদের চারপাশে গার্ডওয়াল নির্মাণ করা হোক। তাতে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রোগীসহ সবাই উপকৃত হবেন। ১৭ বছর ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা একটি রাস্তা ও একটি মসজিদের গার্ডওয়াল হয়তো কোনো বড় প্রকল্প নয়। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি পুরো সমাজের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ। প্রশাসনের উদাসীনতার বোঝা বহন করছে সাধারণ মানুষ। তাদের একটাই দাবি দয়া করে আমাদের দেখুন।