মোঃ সোহেল রানা, রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি:
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে জশনে জুলুছ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ আগষ্ট) জুম্মার নামাজের পর রাঙ্গামাটি জেলা গাউসিয়া কমিটির আয়োজনে পার্বত্যাঞ্চলের সর্ববৃহৎ জশনে জুলুছে শুক্রবার রাঙামাটি শহর পরিণত হয় ধর্মীয় উৎসবের মহামিলনে। ধর্মপ্রাণ মানুষ ছোট-বড় সকল বয়সের পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে পরিবারসহ অংশ নেন এ ঐতিহাসিক শোভাযাত্রায়। শোভাযাত্রাটি শহরের রিজার্ভ বাজার শাহী জামে মসজিদ থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বনরূপা জামে মসজিদে এসে শেষ হয়। এ সময় শোভাযাত্রায় হাজারো মুসল্লি ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নানা সাজে সজ্জিত হয়ে অংশ নেন। শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা আবদুল ওয়াজেদ।
শহরের প্রধান সড়কজুড়ে সাজানো হয় আলোকসজ্জা ও নানা ধরনের বর্ণিল তোরণ। হাজারো মুসল্লি হাতে সবুজ পতাকা, আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এর নাম লেখা ব্যানার, ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে অংশ নেন শোভাযাত্রায়। বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন, মাদ্রাসা ও স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলো শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। পুরো শহরজুড়ে সমবেত কণ্ঠে দুরুদ পাঠ, নাত-শরিফ ও কালেমার ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পরিবেশ।
পরবর্তীতে বনরূপা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাঙ্গামাটি জেলা গাউসিয়া কমিটির আহ্বায়ক হাজী আলী আকবর সওদাগরের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব শামীম জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন বনরূপা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ইকবাল হোসাইন আল ক্বাদেরী, রিজার্ভ বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবু নওশাদ নঈমীসহ অন্যান্য আলেমগণ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মো. হাবীব আজম, পুরাতন বাসস্টেশন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সুলতান মাহমুদ আল ক্বাদেরী, তৈয়বিয়া আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মো. আখতার হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ১২ রবিউল আউয়াল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে আনন্দের দিন—যেদিন আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানবতার মুক্তির বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য শান্তি, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার মহান আদর্শ স্থাপন করেন।
সভায় বক্তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং একই সাথে জশনে জুলুছকেও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি জানান।
আয়োজকরা জানান, প্রতিবছরের মতো এ বছরও শান্তিপূর্ণভাবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জশনে জুলুস আয়োজন করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন ছিল, পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক দলের শত শত সদস্য সার্বক্ষণিক কাজ করেন।
ধর্মীয় এ আয়োজন ঘিরে রাঙামাটি শহরজুড়ে দেখা দেয় আধ্যাত্মিক উচ্ছ্বাস ও ভ্রাতৃত্ববোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, এ উৎসব মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য, সৌহার্দ্য ও ধর্মীয় চেতনাকে আরও জোরদার করে।
শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।